আমাদের চারপাশে পজিটিভ চিন্তা বা বিষয়ের থেকে নেগেটিভ বিষয়গুলো অনেক বেশী প্রকট। যে কারণে, প্রতিটি স্তরে আমরা এই ধরণের চিন্তা দ্বারা তাড়িত হই যা আমাদেরকে একটি স্বাভাবিক পজিটিভ জীবন পার করা থেকে দূরে ঠেলে দেয়। যার কারণে আমরা আমাদের জীবনের দাঁড়িপাল্লায় পজিটিভ বিষয়ের থেকে নেগেটিভ বিষয়গুলোর ভারে নুয়ে পরি। যে কারণে, নেগেটিভ চিন্তা, মানুষ এবং ঘটনা থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত।

আলোচিত ৭ টি উপায়ে নেগেটিভ চিন্তা, মানুষ এবং ঘটনা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে পারেন।

১। নেগেটিভ আলোচনা থেকে কৌশলে দূরে থাকুনঃ

নেগেটিভ মানুষদের কাছ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিন সামান্য একটু কৌশলে। একজন নেগেটিভ মানুষ, যে কিনা সারাক্ষণ অভিযোগ করে, অন্যের বিষয়ে সমালোচনা করে, সকল কিছুতে সমস্যা খুঁজে বের করে, আলাপচারিতার মাঝখানে তাকে জিজ্ঞেস করুন সে ‘কীভাবে তার সমস্যাটি সমাধান করবে বা কি করে এই অবস্থা থেকে উন্নতি করা যায়’। এই প্রশ্নটি আপনাকে সাহায্য করবে কথার মোড় ঘুরিয়ে ফেলতে! কেননা, সমাধানের কথা জিজ্ঞেস করতেই মানুষটি হয় চুপ হয়ে চিন্তা করবে, না হয় আলোচনার বিষয়টি অন্য দিকে নিয়ে যাবে। ঠিক এভাবেই প্রশ্ন করে ব্যাপারটি থামান বা সমাধানের ব্যবস্থা করুন। অর্থাৎ, ঐ পরিস্থিতি হতে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই হবে আপনার করণীয়।

২। অসংলগ্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ না করা:

খেয়াল করে দেখবেন যে, নেগেটিভ মানুষদের আলোচনার টপিক সর্বদাই কেমন যেন অসংলগ্ন ও বেলাইনের হয়। অন্যদের পক্ষ হতে মন্তব্য ও সমর্থন নিয়ে, তারা যেন নিজেদের নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা ও আলোচনায় অন্যদেরকেও জড়িয়ে নিতে চায়। এমন সব আলোচনায় অংশগ্রহণ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ধরুন, এমনি কেউ একজন আপনার অফিসের কোন একটা নিয়ম নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি রকমের সমালোচনা করছে। অথচ, বাকিরা কিন্তু সেই নিয়মের সাথে ঠিকই খাপ খাইয়ে নিয়ে ভালোই দিনাতিপাত করছে।

এই নেগেটিভ বিষয় হতে দূরে থাকতে একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে আপনার কর্তব্য হবে সেই আলোচনায় একেবারেই কোন মন্তব্য না করে অংশগ্রহণ না করা।

৩। আপনার সুখী থাকা, আপনার নিজের হাতে:

সফল মানুষদের মনোভাবটা অনেকটা এরূপ- নিজেদের কোন কাজ নিয়ে যদি তারা খুব সন্তুষ্ট ও সুখী থাকে, অন্য কারোর মন্তব্য তখন তারা একদম পরোয়া করে না! একটু ভাবুন তো? আপনি কি কখনো পারবেন নেগেটিভ কোন মানুষের মানসিকতায় সম্পূর্ণ পরিবর্তন আনতে? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তাহলে জেনে রাখুন, তাদের এরূপ মানসিকতার জন্যই কিন্তু তাদের মন্তব্যগুলোও হয় অপ্রীতিকর, মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও!

অতএব, যেহেতু অন্যদেরকে পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনার নেই, সেহেতু তাদের মাপকাঠিতে নিজেকে তুলনা করে হতাশাগ্রস্থ হওয়া বোকার কাজ!

যেদিন হতে আপনি অন্য মানুষদের মন্তব্য হতে নিজেকে যাচাই করা শুরু করবেন, ঠিক সেদিন হতেই আপনি নিজের সুখের চাবি অন্যদের হাতে সঁপে দিবেন। কিন্তু এমনটা যেন না হয়, তাই নিজেকে নেগেটিভ বিষয় হতে দূরে রাখুন। নিজের সুখের মানদণ্ড নিজের মত করে গড়ে তুলুন।

৪। সমস্যায় নয়, সমাধানে মনোযোগী হওয়াঃ

নেগেটিভ কোন মানুষের সাথে কথোপকথনে লিপ্ত হলে, “উফ! উনি এমন কেন? কখন থামবে! ধুর কি বিরক্তিকর!” ইত্যাদি চিন্তা মাথায় না এনে, বরং চিন্তা করুন যে কীভাবে ঐ পরিস্থিতি হতে বেরিয়ে আসবেন। অর্থাৎ, সমস্যা চিন্তা না করে, সমাধান চিন্তা করুন। আপনি এরকম পরস্থিতিতে বিরক্তি বোধ করবেন না কি মাথা ঠাণ্ডা করে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবেন- তা কিন্তু একান্তই আপনার উপর নির্ভর করে! যদি বিরক্তিতে পর্যবসিত হতে না চান, সমাধানের প্রতি মনোযোগী হন।

নেগেটিভ একটি পরিস্থিতি হতে বেরিয়ে আসার ‘উপায় চিন্তা করার সময়’ আপনার মধ্যে একটি পজিটিভ মনোভাব তৈরি হয় যা আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে।

সুতরাং, নিজের জীবনে অথবা কোন পরিস্থিতিতে নেগেটিভ অবস্থায় পরলে সমস্যা নিয়ে আকাশ পাতাল না ভেবে সমাধানে মনোযোগী হন।

৫। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিনঃ

ভবিষ্যৎ কোন ভোগান্তি বা ভুল থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে তারা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষা সর্বদাই মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যর্থতা সাফল্যের চাবিকাঠি নয়, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে লাগানই সাফল্যের চাবিকাঠি। আপনিও ঠিক একই ভাবে মনে রাখুন যে পূর্বে কীভাবে আপনি কোন একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হতে নিজেকে উদ্ধার করেছিলেন এবং ভবিষ্যতে সেই বুদ্ধিটাই খাঁটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

৬। আপনার চিন্তাই আপনার বাস্তবকে গড়ে তোলেঃ

অন্যদের মন্তব্য হয়ত অনেক কে কিছুটা হলেও ভাবায়। কেউ আমাদের নিয়ে নেগেটিভ একটি কথা বললে সারা দিন রাত আমরা হয়তো তা নিয়ে ভাবা শুরু করে দিই। কিন্তু এটি প্রকট পর্যায়ে পৌঁছায় যখন আমরা নিজেদের নিয়ে আসলেই তা বিশ্বাস করতে শুরু করি এবং ফলশ্রুতিতে হীনমন্যতায় ভুগি।

আমরা যা চিন্তা করিই আমরা ধীরে ধীরে টাই হয়ে উঠি।

আপনার করণীয় হল বিষয়টিকে এতো প্রকট পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়া। কীভাবে? সহজ! তাদের মন্তব্যগুলো শুনুন, যাচাই করুন বিবেক দিয়ে যে আসলেই আপনার নিজেকে নিয়ে অমন উপলব্ধি কখনো হয়েছে কি না। যদি না হয়, তাহলে তা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলে দিন। কিন্তু “আমি মনে হয় আসলেই এরকম!” চিন্তা হতে নিজেকে দূরে রাখুন। নাহলে তা আপনার মনে দীর্ঘস্থায়ী একটি খারাপ প্রভাব ফেলবে যা হতে বেড়িয়ে আসা খুব কঠিন হয়ে পড়বে!

৭। চিন্তাগুলো শেয়ার করুনঃ

জীবনের সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা মানুষ নিজে নিজে সামলাতে পারে না বলেই হয়তো ‘বন্ধু’ বা ‘পরিবার’ নামক শব্দগুলো বিরাজ করে পৃথিবীর বুকে। অপ্রীতিকর কোন পরিস্থিতি হতে বের হওয়ার জন্য তৎক্ষণাৎ কী করা উচিত বা গতানুগতিক চিন্তার থেকে ব্যতিক্রম দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারবে সেই পরিস্থিতির বাইরে থাকা’ কোন মানুষ। কেননা, আপনার মস্তিষ্ক ইতোমধ্যে ঘোর চিন্তায় মগ্ন। সমাধানের জন্য আলাদা করে চিন্তা করার কাজটি তখন আপনার মস্তিষ্ক কার্যকরীভাবে করতে পারে না। তাই নির্ভরযোগ্য কোন বন্ধু, সহকর্মী কিংবা খুব কাছের মানুষের সাথে আপনার সমস্যাটি শেয়ার করুন এবং সাহায্য নিন। সমাধান চিন্তা করার ধারাবাহিকতা বদলাতে এটা খুব জরুরী ও কার্যকরী একটি উপায়।